যীশুর দীক্ষাস্নান (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা মুক্তিদাতা যীশুর জীবন ও কাজ | - | NCTB BOOK
26
26

আমরা অনেকেই শিশু অবস্থায় দীক্ষাস্নান বাপ্তিস্ম সাক্রামেন্ত গ্রহণ করেছি। প্রভু যীশু বড়ো হয়ে দীক্ষাস্নান গ্রহণ করেছেন। তবে প্রভু যীশুর দীক্ষাস্নান আমাদের দীক্ষাস্নান থেকে ভিন্ন রকমের ছিল। তিনি দীক্ষাগুরু যোহনের কাছে মন পরিবর্তনের দীক্ষাস্নান গ্রহণ করেছিলেন। আমরা যে দীক্ষাস্নান গ্রহণ করি সেই দীক্ষাস্নান বলতে আমরা বুঝি প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কর্তৃক স্থাপিত ও মণ্ডলী কর্তৃক স্বীকৃত বাহ্যিক চিহ্ন বা প্রতীক। এর মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ বা অনুগ্রহ লাভ করি। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজে দীক্ষাস্নান গ্রহণ করে দীক্ষাস্নান সংস্কারের একটি নতুন রূপ দান করেছেন। তা হলো জল ও আত্মায় নতুন জীবন লাভ।

প্রভু যীশু তাঁর প্রকাশ্যজীবন শুরু করেছেন জর্ডন/যদন নদীতে দীক্ষাগুরু যোহনের দ্বারা দীক্ষাস্নান গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে। দীক্ষাগুরু যোহন মানুষকে পাপমোচনের উদ্দেশ্যে মন পরিবর্তনের আহ্বান করেন। তিনি এই বলে তাঁর মন পরিবর্তনের বাণী প্রচার করেন, তোমরা মন ফেরাও। তিনি মানুষকে মনের আঁকা-বাঁকা সমস্ত চিন্তা দূর করে সত্য ও সুন্দরের সহজ-সরল পথে চলতে আহ্বান করেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক করগ্রাহক, ফরিসি, সাদুকি ও পাপী মানুষ মন পরিবর্তন করে দীক্ষাস্নান গ্রহণ করেছিলেন।

একদিন যীশু নিজে দীক্ষাগুরু যোহনের কাছে এলেন দীক্ষাস্নান গ্রহণ করতে। তিনি নিষ্পাপ হলেও দীক্ষাস্নান গ্রহণ করেছেন ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশের জন্য। যোহন প্রথমে যীশুকে দীক্ষাস্নান দিতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন যে, তাঁরই বরং যীশুর কাছে দীক্ষাস্নান গ্রহণ করা উচিত। যীশু কিন্তু দমে যাননি। যীশু তাঁকে বললেন, যেন এখনকার মতো যোহন রাজি হন। অতএব যোহন যীশুকে দীক্ষাস্নান দিলেন। দীক্ষাস্নান গ্রহণ করার সাথে সাথে পবিত্র আত্মা এক কপোতের আকারে যীশুর উপর নেমে এলেন। আর তখনই স্বর্গ থেকে এই বাণী শোনা গেল, "ইনি আমার প্রিয় পুত্র, তোমরা এঁর কথা শোন"। উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে তা শুনল ও দেখল। এই ঘটনাটি হলো ঈশ্বরপুত্র ও ইস্রায়েলের মশীহ বা ত্রাণকর্তারূপে যীশুর আত্মপ্রকাশের আরম্ভ।

কাজ: যীশুর দীক্ষাস্নানের ঘটনাটি অভিনয় করে দেখাও।
যীশুর দীক্ষাস্নানের তাৎপর্য ও গুরুত্ব

যীশু খ্রীষ্ট নিজে দীক্ষাস্নান গ্রহণ করে পরমেশ্বরের কষ্টভোগী সেবক হিসেবে তাঁর প্রেরণকর্ম শুরু করেছেন। তিনি পাপী মানুষের সাথে নিজেকে গণ্য করেছেন। দীক্ষাস্নান গ্রহণ করে কালভেরিতে নিজের রক্ত ঝরিয়ে মানুষের মুক্তির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি পিতার ইচ্ছার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁর সেই সম্মতির প্রত্যুত্তরে পিতা ঈশ্বরও তাঁর প্রতি প্রীত আছেন বলে ঘোষণা করলেন। যীশুর দেহধারণের সময় থেকে যে আত্মা তাঁর ওপর অধিষ্ঠিত ছিল সেই একই আত্মা তাঁর ওপর এসে বিরাজ করে। আদমের পাপের ফলে স্বর্গের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দীক্ষাস্নানের ফলে আমরা পাপমুক্ত হয়ে স্বর্গে যাবার সুযোগ পাই। পবিত্র আত্মার অবতরণের ফলে এক নতুন সৃষ্টির সূচনা হলো।

দীক্ষাস্নানের মধ্য দিয়ে একজন খ্রীষ্টভক্ত প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সহভাগী হয়ে জল ও আত্মায় নতুন জন্মলাভ করে। প্রভু যীশুর মধ্য দিয়ে সে হয়ে ওঠে পিতা ঈশ্বরের একান্ত প্রিয়জন। সে চলতে পারে জীবনের নবীনতায়, যেখানে কোনো পাপ-কালিমা নেই। এভাবে দীক্ষাস্নাত প্রত্যেক ব্যক্তিই যীশুর পবিত্রতায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।

কাজ: দীক্ষাস্নানের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনে কী পরিবর্তন হয়, তা দলে আলোচনা করো।
Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;